মূর্তি বিরোধী আন্দোলনের সাথে একাত্ততা ঘোষণা
মূর্তি-ভাস্কর্য স্থাপন নয় আল্লাহর নাম খচিত স্মৃতি স্তম্ভ নির্মাণ করুন
– সমাবেশ ও গণমিছিলে পীর সাহেব চরমোনাই
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই বলেছেন, সরকার শরীয়াহ বিরোধী কোনো আইন করবে না বলে নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষণা করে ক্ষমতায় এসে এখন নিজেই শরীয়াহ বিরোধী কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, মূর্তি বা ভাস্কর্য ইসলামবিরোধী সংষ্কৃতি। শরীয়াবিরোধী ও হারাম কাজ। এখন শেখ মুজিবের নামে বিভিন্ন জায়গায় মূর্তি স্থাপনের যে উদ্যাগ নেয়া হয়েছে তা কোনভাবেই শরীয়াহ সমর্থন করে না। কাজেই কৃত ওয়াদা পালনে মূর্তি স্থাপন না করে শেখ মুজিবের নামে আল্লাহর নিরানব্বই নাম খচিত স্মৃতি স্তম্ভ বা কুরআনের ক্যালিগ্রাফী স্থাপন করুন। এতে শেখ মুজিবের আত্মা শান্তি পাবে। তিনি মূর্তিবিরোধী আন্দোলনের কর্মসূচির সাথে একাত্ততা ঘোষণা করেন।
পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, সরকার রাতের আঁধারে ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতায় আসার কারণে দেশে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। দেশের সাধারণ মানুষের জন্য কোন দরদ নেই। সারাদেশে সরকারের ব্যর্থতা ও ধর্ষণের বিরুদ্ধে ক্রমেই মানুষ ফুঁসে উঠছে। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন উর্ধ্বগতির কারণে জনজীবন চরম দুর্বিষহ হয়ে উঠছে। সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না সরকার। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম যেভাবে পাগলা ঘোড়ার মতো লাগামহীনভাবে ছুটে চলছে, তা সরকার নিয়ন্ত্রণ না করে সরকার দলীয় লোকজনের পকেট ভারী করার সুযোগ করে দিয়েছে। দেশে নিরব দুর্ভিক্ষ চলছে। জনগণের জন্য ভাবুন। মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে দেশের সম্পদ লুটপাট করছে সরকারের লোকজন।
পীর সাহেব বলেন, হাল-জামানা আইয়্যামে জাহিলিয়াতকেও হার মানিয়েছে। শুধু আইন করলেই হবে না, ধর্ষণ ও যেনা-ব্যভিচার বন্ধ করতে হলে এগুলোর উৎস আগে বন্ধ করতে হবে। একদিকে অশ্লীলতা উসকে দেয়া হবে, অপরদিকে ধর্ষণ বন্ধ করার আইন দিয়ে ধর্ষণ বন্ধ হবে না।
আইন শৃঙ্খলার অবনতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রক্ষক যেখানে ভক্ষক হয়, সেখানে আইনের শাসন থাকে না। তিনি পুলিশি হেফাজতে সিলেটের রায়হান হত্যাকাণ্ড হত্যার ঘটনা ধামাচাপা দিয়ে দিতে দোষী পুলিশকে ধরিয়ে দিতে ১০ লাখ টাকার ঘোষণা আইন-শৃঙ্খলার দেওলিয়াত্ব প্রমাণ করে। রায়হান হত্যার ঘটনা পুলিশি হত্যাকাণ্ড ছিল, তা দিবালোকের মতো স্পষ্ট। পুলিশ বাহিনীকে বিতর্কের ঊর্ধ্বে ও ভঙ্গুর ভাবমূর্তি রক্ষায় সরকারের উচিত দোষী পুলিশ সদস্যদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করে তা দ্রুত কার্যকর করা।
আজ ২৩ অক্টোবর ২০২০ শুক্রবার, বাদ জুমা জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন উর্ধ্বগতি, দেশব্যাপী বেপরোয়া যেনা-ব্যভিচার ও ধর্ষণ এবং আইন-শৃঙ্খলার চরম অবনতির প্রতিবাদে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগরীর উদ্যোগে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশ ও গণমিছিল পূর্ব জমায়েতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন সংগঠনের প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী, মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান।
প্রধান বক্তা ছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ। মহানগর উত্তর সভাপতি অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম, ইশা ছাত্র আন্দোলন এর কেন্দ্রীয় সভাপতি এম. হাছিবুল ইসলাম, মাওলানা এবিএম জাকারিয়া, মু.হুমায়ুন কবির, মুফতী ফরিদুল ইসলাম, মাওলানা এইচএম সাইফুল ইসলাম প্রমুখ।
আরো উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, কেএম আতিকুর রহমান, হাজী মনির হোসেন, মাওলানা নেছার উদ্দিন প্রমুখ।
প্রচণ্ড বৈরী আবহওয়া সত্ত্বেও হাজার হাজার মানুষ মিছিলে অংশগ্রহণ করেন।
পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, পর্নোগ্রাফি সারাদেশে মহামারি আকার ধারণ করেছে। পর্নোগ্রাফি, দেহ-ব্যবসা, অশ্লীলতা অবিলম্বে বন্ধ না করলে ধর্ষণ বন্ধ করা যাবে না। তিনি বলেন, যেনা-ব্যভিচার, পরকিয়ারও কঠোর শাস্তির বিধান করতে হবে। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেন, ক্ষমতার অহঙ্কার করে যা ইচ্ছে তাই করার চেষ্টা করবেন না। নমরুদ, ফেরাউন ও শাদ্দাদ কিন্তু আপনার চেয়ে বড় শক্তিশালী ছিল। আল্লাহর শক্তির সামনে কেউ টিকেনি, আপনিও টিকবেন না।
প্রিন্সিপাল মাদানী বলেন, নারী প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, শিক্ষামন্ত্রীসহ সরকারের উচ্চপদে বেশিরভাগ নারী। তারপরও নারীদের প্রতি এত জুলুম, নির্যাতন, ধর্ষণ মেনে নেয়া যায় না। ছাত্রলীগের নেতারাই ধর্ষণকাজে বেশি জড়িত। ছাত্রলীগ করে তারা ভাল ছাত্র না হয়ে ধর্ষকলীগ হলো। সকল অপকর্মের সাথে জড়িত সরকার দলীয় লোকজন। ধর্ষণ, মাদক কারাবারি, টেন্ডারবাজি, দুর্নীতিসহ সকল অপকর্মের সাথে জড়িত।
তিনি বলেন, রাতের আধারে ক্ষমতায় গিয়ে এখন ধরাকে শরা জ্ঞান করছেন। সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়ে দেখুন আপনার দলের অবস্থান কোথায়?
মহাসচিব মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেন, খুন, ধর্ষণ, চুরি-ডাকাতি বন্ধে আইন থাকলেও এগুলো বন্ধ হচ্ছে। কেন আইন কাজে লাগছে না। জনগণের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। ব্যবস্থা না নিলে জনগণ সরকারের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠবে। বিভিন্ন স্থানে নারীদেহের নগ্ন মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে। এগুলো বন্ধ না হলে দেশময় আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেন, ঢাবির মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমন একজন শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন, এখন ঢাবির ছাত্র হিসেবে পরিচয় দিতেও লজ্জা লাগে। সেই নাস্তিক জিয়া রহমানকে অপসারণ করতে হবে। তিনি সরকারি টাকায় মূর্তি ও নৌকা বানানোর নিন্দা জানিয়ে বলেন, এদেশটা আওয়ামীলীগের নয়, ১৬ কোটি জনগণের। জনগণের টাকায় মূর্তি স্থাপন সহ্য করা হবে না।
মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ বলেন, শুদ্ধভাবে জোরে জোরে বেশি বেশি সালামের মাধ্যমে নাস্তিকদের জবাব দেয়া হবে। তিনি ধর্ষণ বন্ধে পাড়া মহল্লায় ধর্ষণবিরোধী বৈঠক করে ধর্ষণ বন্ধে কাজ করার আহবান জানান। তিনি কতিপয় মিডিয়ার সমালোচনা করে বলেন, আপনারা ইসলামবিদ্বেষী ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে স্বাধীন মতপ্রকাশের নামে ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড করবেন না। তাহলে ইসলামী জনতা আপনারদেরও ছাড়বে না।
সভাপতির বক্তব্যে শেখ ফজলে বারী মাসউদ বলেন, ধর্ষণ বন্ধে আইনের শাসন এবং আইন প্রয়োগ করতে হবে। সেই সাথে ধর্ষণের সকল উৎস বন্ধ করতে হবে। সালাম ও আল্লাহ হাফেজকে জঙ্গিবাদের সাথে তুলনা করে ঢাবির নরাধম শিক্ষক মূর্খতার পরিচয় দিয়েছে। তাকে অবিলম্বে বহিষ্কার করতে হবে।