সরকারের ব্যর্থতার কারণে সর্বত্র ধর্ষণ ছড়িয়ে পড়েছে
ইসলামী শরীয়ায় বিচার না করলে ধর্ষণ কমবে না
— বিক্ষোভ সমাবেশে প্রিন্সিপাল সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ মাদানী
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী বলেছেন, দুর্নীতি, রাহাজানি, ছিনতাই, চুরি-ডাকাতি, যেনা-ব্যভিচার, নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, খুন দিন দিন বেড়েই চলছে। সরকার কোনকিছুরই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।
তিনি বলেন, শরীয়াহ আইনে ধর্ষণের বিচার হলে ৯৯% ধর্ষণ বন্ধ হয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেত্রী, স্পিকার, শিক্ষামন্ত্রীসহ সর্বত্র নারীদের জয়-জয়াকার অবস্থা। তারপরও নারী ধর্ষণ কমছে না, নারীদের নিরাপত্তা নেই। মাদানী বলেন, বিচারহীনতা ও বিচারে দীর্ঘসূত্রিতার কারণে নারী নির্যাতন ও ধর্ষণ ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে লোমহর্ষক ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে তা সমস্ত জাতিই শুধু নয়, সমস্ত বিশ্ব বিবেককে নাড়া দিয়েছে। মাদানী বলেন, জাতিকে অভিশাপ থেকে বাঁচাতে ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই। ইসলাম সব সময় ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা এবং দেশকে সমৃদ্ধশালী করার পক্ষে, কোন ধরণের অন্যায়ের সুযোগ ইসলামে নেই। মানুষের প্রকৃত স্বাধীনতা, জান-মাল ও ইজ্জতের নিশ্চয়তা বিধান ইসলাম ছাড়া সম্ভব নয়। দেশের এই ক্রান্তিকালে তিনি সকলকে ন্যায় ও ইনসাফের পক্ষে এবং সন্ত্রাস, দুর্নীতি, ধর্ষণ ও মাদকমুক্ত উন্নত কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসার আহবান জানান।
তিনি ১৬ অক্টোবর বিভাগীয় শহরে বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
আজ শুক্রবার বাদ জুমা সারাদেশে ক্রমবর্ধমান নারী নির্যাতন-ধর্ষণসহ নারীর প্রতি বর্বরতা এবং আইন-শৃঙ্খলার চরম অবনতির প্রতিবাদে রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগরীর উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল পূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এতে প্রধান বক্তা ছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলম। ঢাকা মহানগর উত্তর সভাপতি অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম, মাওলানা এবিএম জাকারিয়া, মাওলানা আরিফুল ইসলাম, ডা. শহিদুল ইসলাম, হুমায়ুন কবির, মুফতী ফরিদুল ইসলাম, ছাত্রনেতা ইমরান নূর, প্রভাষক আব্দুস সবুর প্রমুখ। উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক মাওলানা লোকমান হোসাইন জাফরী ও সহ-অর্থ সম্পাদক আলহাজ্ব মনির হোসেন।
মাওলানা মুহাম্মাদ ইমতিয়াজ আলম বলেন, বর্তমান সরকার দেশকে ধর্ষকদের অভয়ারণ্যে পরিণত করেছে। ফলে সর্বত্র ধর্ষণ আর ধর্ষণ। আর এর সাথে জড়িত ছাত্রলীগ, যুবলীগ, শ্রমিকলীগসহ সরকারদলীয় লোকজান। সরকার ৩০ ডিসেম্বর ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতায় আসার পরের দিন নোয়াখালীতে একজন গৃহবধুকে ধর্ষণ করার পর ২বছরেও বিচার হয়নি। তাই এই সরকার ধর্ষকদের সরকার। তিনি বলেন, শুধু নোয়াখালীর ঘটনাই নয় গত কয়েক মাসে ধর্ষণের মহোৎসব শুরু হয়েছে। নারীর শ্লীলতাহানী, নারীর উপর নির্যাতন এটা এখন ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নিয়মিত অপকর্মে পরিণত হয়েছে। সারাদেশে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের ধর্ষণ, গুম, খুন ও চাঁদাবাজি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে শুধু তাই নয় অর্থনীতি আজ ধংসের মুখে। মানুষের জীবনের কোনো নিরাপত্তা নাই। আজকে এই দেশে সবচেয়ে অসহায় অবস্থায় আছেন আমাদের মা বোনেরা। প্রতি মুহূর্তে তারা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছে। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই সরকার ক্ষমতায় থাকার সকল অধিকার হারিয়েছে। তাদের ক্ষমতায় থাকার কোনো ধরণের কোনো কারণ নেই।
সভাপতির বক্তব্যে মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ বলেন, দেশ ধর্ষক ও দুর্নীতিবাজদের দেশে পরিণত হয়েছে। গাজীপুরে পুলিশের পোশাক পড়ে ধর্ষণ করে রাষ্ট্রের পোশাককে কলঙ্কিত করেছে। এদের প্রকাশ্যে বিচার হতে হবে। সড়ক মন্ত্রী কাদের বলছেন, বিএনপি’র আমলেও ধর্ষণ হয়েছে।’ তাহলে এখনও ধর্ষণ চলতে থাকবে? তার এ বক্তব্যে দেশবাসীকে বিস্মিত করেছে। এজন্য তার অঞ্চলে সবচেয়ে ধর্ষণ বেশি হচ্ছে। তিনি বলেন, করোনা মহামারির প্রাক্কালে স্বাস্থ্যখাতের ভয়াবহ দুর্নীতি, নারায়ণগঞ্জে তিতাস গ্যাসের দুর্নীতির কারণে মসজিদে গ্যাস লাইন বিস্ফোরণে ৩৫ মুসল্লি মৃত্যু আড়াল করতে সরকার বিভিন্ন দিকে মানুষের দৃষ্টি আড়াল করছে। আমরা বারবার সরকারকে বলেছি কিন্তু সরকার কোনো কর্নপাত করেনি। কারণ এই সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। এই সরকার রাতের আধারে জোর করে জনগণের ভোট ডাকাতি করে অবৈধভাবে ক্ষমতায় বসে আছে।
পরে একটি বিশাল মিছিল বায়তুল মোকার মসজিদ থেকে বের হয়ে পল্টন মোড় হয়ে নাইট এ্যাঙ্গেল পৌছঁলে পুলিশ পূর্ব থেকে কাঁটাতারের ব্যারিগেট দিয়ে মিছিলের গতি রোধ করে। সেখানেই নেতৃবৃন্দ মুনাজাতের মাধ্যমে মিছিলের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।