৫৫/বি (৩য় তলা), পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০

ফোন : ০২-৯৫৬৭১৩০, ফ্যাক্স : ০২-৭১৬১০৮০

যিনা-ব্যভিচার ও ধর্ষণের বিচার শরীয়াহ আইনে করতে হবে

শুধু আইন পাস নয় বাস্তবায়ন করতে হবে এবং অপপ্রয়োগ বন্ধ করতে হবে
-বিশাল সমাবেশ ও গণমিছিলে মুফতী সৈয়দ ফয়জুল করীম

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর নায়েবে আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই বলেছেন, দেশে আইন থাকলেও আইনের বাস্তবায়ন নেই। তাই শুধু আইন পাশ নয়, ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান কার্যকর করে আইনের প্রয়োগ করতে হবে। তিনি বলেন, শুধু ধর্ষণের মৃত্যুদণ্ড নয়, যিনা-ব্যভিচার রোধেও আইনের প্রয়োগ প্রয়োজন। তিনি বলেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা পুলিশের জুলুম নির্যাতনে সিলেটে যুবকের মুত্যু বিশ্ববিবেককে নাড়া দিয়েছে। এই যদি হয় প্রশাসনের অবস্থা তাহলে সাধারণ মানুষ যাব কোথায়? তিনি ধর্ষণমুক্ত বাংলাদেশ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে বলে সবাইকে আহবান করেন। তিনি বলেন, ধর্ষণের আইন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আছে, কিন্তু ধর্ষণ বন্ধ হচ্ছে না। দেশে অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, অশ্লীল সিনেমা, হিন্দি ফিল্ম চালু রেখে ধর্ষণ বন্ধ করা যাবে না। ধর্ষণের এ আইন অপপ্রয়োগের বলি হয়ে নিরীহ মানুষ যেন না মৃত্যুমুখে পতিত না হয়। তিনি ইসলামী আইনে যিনা-ব্যভিচার, পরকিয়ার বিচারের দাবিতে ২৩ অক্টোবর ঢাকায় বিশাল সমাবেশ ও গণমিছিল কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

আজ ১৬ অক্টোবর ২০২০ শুক্রবার, বাদ জুমা সারাদেশে ক্রমবর্ধমান নারী নির্যাতন-ধর্ষণসহ নারীর প্রতি বর্বরতা এবং আইন-শৃঙ্খলার চরম অবনতি, সিলেটে পুলিশ হেফাজতে যুবক রায়হানের মৃত্যু ও দ্রব্যমূল্যের উধর্বগতির প্রতিবাদে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগরীর উদ্যোগে বায়তুল মোকাররম উত্তর গেটে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশ ও গণমিছিল পূর্ব জমায়েতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান। প্রধান বক্তা ছিলেন ঢাকা মহানগর উত্তর সভাপতি অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম, যুবনেতা কেএম আতিকুর রহমান, ছাত্রনেতা এম. হাছিবুল ইসলাম, মাওলানা এবিএম জাকারিয়া, মাওলানা আরিফুল ইসলাম, ঢাকা জেলা সেক্রেটারী আলহাজ্ব শাহাদাত হোসাইন, হুমায়ুন কবির, মুফতী ফরিদুল ইসলাম, মাওলানা এইচএম সাইফুল ইসলাম, মাওলানা বাছির মাহমুদ প্রমুখ।

মুফতী ফয়জুল করীম বলেন, যিনা-ব্যভিচার, অবৈধ সম্পর্ক, পরোকিয়ার ব্যাপারে আইন কী হবে? এমপি-মন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির বক্তব্য ‘প্রেম করবেন, একজনের সাথে করবেন’ এ ধরণের বক্তব্য ধর্ষণকে উস্কে দিচ্ছে। পর্দার বিধান থাকলে ধর্ষণ অনেকাংশে কমে যাবে। ধর্মীয় অনুশাসন ও নৈতিক মূল্যবোধের অভাবে মানুষ বিপথগামী হয়। তাই বিয়ের বয়স কমিয়ে বিবাহ বন্ধনকে সহজ করে দিতে হবে। ব্যভিচার ও ধর্ষণ রোধে আইনের শাসন বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ শক্তি নিয়োগ করতে হবে। নিপীড়িতের প্রতি সদয় এবং অপরাধীকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। দ্রুত বিচার ট্রাইবুনাল ও শরীয়া আইনের মাধ্যমে ধর্ষণের শাস্তি কার্যকর করতে হবে।

তিনি বলেন, বর্তমানে আওয়ামী সরকার ১ যুগ ধরে ক্ষমতায় থাকার কারণে ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় ধর্ষণ আজ মহামারি আকার ধারণ করেছে। সরকারের নজিরবিহীন দূর্বৃত্তায়নের রাজনীতি, অঙ্গ সংগঠন বিশেষ করে ছাত্রলীগ, যুবলীগের আধিপত্যবাদ ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের ধারাবাহিক অধ্যায়। এভাবে ভোটবিহীন অবৈধ সরকার দেশের মধ্যে এক এক ক্ষমতা দানব সৃষ্টি করে রেখেছে। তিনি মাগুরায় ইসলামী আন্দোলনের শান্তিপূর্ণ মানববন্ধনে জেলা ছাত্রলীগের হামলায় ১৫জন আহত করায় তীব্র নিন্দা জানান এবং ভোলার ফরাশগঞ্জ ইউনিয়নের হাতপাখার প্রার্থীর ওপর আওয়ামীলীগের প্রার্থীর হামলা প্রমাণ করে সরকার গুণ্ডাবাহিনী দিয়ে দিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। গুণ্ডাবাহিনী দিয়ে সন্ত্রাসমুক্ত দেশ সম্ভব নয়।

মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, দেশে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। ভোটারবিহীন সরকার ছলেবলে কলে কৌশলে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য মরিয়া হয়ে উঠছে। কিন্তু সরকারের অপকর্মের ফলে দেশের সাধারণ জনগণ ফুসে উঠছে। জনগণকে শান্ত করতে সরকার তড়িগড়ি ধর্ষণের আইন পাস করছে। সরকার সাংবিধানিক সকল প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশন, প্রশাসনসহ ধ্বংস করে দিয়েছে। সরকারের ইসলামের কোন দরদ নেই। তিনি বলেন, ধর্ষকদের জনগণের মুখোমুখি করতে হবে। জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। গুণ্ডাবাহিনীদের থেকে প্রশাসনকে গুটিয়ে নিতে হবে।

গাজী আতাউর রহমান আরো বলেন, সরকার দুর্নীতি, মাদক, নারী নির্যাতন-ধর্ষণ, হত্যা, গুম, চুরি এবং দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি রোধে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলার অবনতিতে সাধারণ নাগরিকরা আতঙ্কে দিনাতিপাত করছে। অপরাধীদের প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন। যে কারণে মাদক ব্যবসা, অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসা, চাঁদাবাজি, অর্থপাচার, খুন, রাহাজানির অভিযোগে তারা গ্রেফতার হন, ধর্ষণের ঘটনায় আসামি হন।

সভাপতির বক্তব্যে মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ বলেন, বর্তমান সরকার দেশকে ধর্ষকদের অভয়ারণ্যে পরিণত করেছে। ফলে সর্বত্র ধর্ষণ আর ধর্ষণ। আর এর সাথে জড়িত ছাত্রলীগ, যুবলীগ, শ্রমিকলীগসহ সরকারদলীয় লোকজন। নারীর শ্লীলতাহানী, নারীর উপর নির্যাতন এটা এখন ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নিয়মিত অপকর্মে পরিণত হয়েছে। সারাদেশে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের ধর্ষণ, গুম, খুন ও চাঁদাবাজি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে শুধু তাই নয় অর্থনীতি আজ ধংসের মুখে। মানুষের জীবনের কোনো নিরাপত্তা নাই। আজকে এই দেশে সবচেয়ে অসহায় অবস্থায় আছেন আমাদের মা বোনেরা। প্রতি মুহূর্তে তারা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছে। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই সরকার ক্ষমতায় থাকার সকল অধিকার হারিয়েছে। তাদের ক্ষমতায় থাকার কোনো ধরণের কোনো কারণ নেই।

তিনি বলেন, পর্ণোগ্রাফি, অশ্লীল ওয়েবসাইট, ওয়েব সিরিজ এবং ভারতীয় ও পশ্চিমাসহ ভিনদেশী অপসংস্কৃতি বিস্তার, ইতিবাচকভাবে প্রচার বন্ধ করা জরুরি। মাদক উৎপাদক, আমদানী, বৈধ-অবৈধ মদের বার, নাইট ক্লাব, স্পা এবং সকল প্রকার পতিতাবৃত্তি বন্ধ করতে হবে।

তিনি বলেন, পুলিশ হত্যা ও ধর্ষণের কাজে রাষ্ট্রে পোশাক ব্যবহার করে রাষ্ট্রকে কলঙ্কিত করছে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি এবং ট্যাক্স বৃদ্ধি করে জনগণকে শোষণ করছে। তিনি এই লুটেরাদের বিরুদ্ধে গণআন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহবান জানান। দেশের বিচারব্যবস্থা, সরকার ও বিরোধী দলের প্রতি সারাদেশে সরকারের ছত্রছায়ায় যিনা ব্যভিচার ও ধর্ষকদের উৎপাদন কারখানা বন্ধ করতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারী দল, বিরোধী দল, শিক্ষক, রাজনীতিবীদ, সকল দায়িত্বশীলদের ব্যক্তিদের ঐক্যবদ্ধভাবে এ মহামারী থেকে রক্ষা পেতে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে।

মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ বলেন, সিলেটে পুলিশের হাতে যুব খুন ও গাজীপুরে পুলিশের পোশাক পড়ে ধর্ষণ করে রাষ্ট্রের পোশাককে কলঙ্কিত করেছে। এদের প্রকাশ্যে বিচার হতে হবে। ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে আগুন লেগেছে। এ আগুনে দ্বগ্ধ হচ্ছে সাধারণ মানুষ। সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। তিনি বলেন, জাতিকে অভিশাপ থেকে বাঁচাতে ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই। ইসলাম সবসময় ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা এবং দেশকে সমৃদ্ধশালী করার পক্ষে, কোন ধরণের অন্যায়ের সুযোগ ইসলামে নেই। মানুষের প্রকৃত স্বাধীনতা, জান-মাল ও ইজ্জতের নিশ্চয়তা বিধান ইসলাম ছাড়া সম্ভব নয়। দেশের এই ক্রান্তিকালে তিনি সকলকে ন্যায় ও ইনসাফের পক্ষে এবং সন্ত্রাস, দুর্নীতি, ধর্ষণ ও মাদকমুক্ত উন্নত কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসার আহবান জানান।

সমাবেশে শেষে একটি বিশাল মিছিল বায়তুল মোকাররম উত্তর গেইট থেকে বের হয়ে পল্টন মোড় হয়ে নাইট এ্যাঙ্গেলে গিয়ে মুনাজাতের মাধ্যমে গণমিছিলের সমাপ্তি হয়।

 

শেয়ার করুন

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on facebook

অন্যান্য অপশক্তি-অপসংস্কৃতি প্রতিরোধ, গণআন্দোলন, রাজনৈতিক কর্মসূচি

Scroll to Top

সদস্য ফরম

নিচের ফরমটি পূরণ করে প্রাথমিক সদস্য হোন

small_c_popup.png

প্রশ্ন করার জন্য নিচের ফরমটি পূরণ করে পাঠিয়ে দিন