হাফেজ রেজাউলের খুনিরা সরকার দলীয় হওয়ায় তাদের আড়াল করছে
গণবিচ্ছিন্ন সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে -ঢাকায় বিক্ষোভ সমাবেশে ইসলামী আন্দোলন নেতৃবৃন্দ
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেছেন, সরকারের জনসমর্থন তলানীতে। মাইকিং করেও ভোট কেন্দ্রে আনতে পারছে না। যা আসছে তাও আবার ১০ ভাগের কম। সরকারের পক্ষে এর চেয়ে বেশি জনসমর্থন নেই। আরও আছে চাঁদাবাজ, গুন্ডা ও মাস্তান। এর মাধ্যমে সরকার পুনরায় ক্ষমতায় যেতে মরিয়া হয়ে আছে। সরকার বিরোধী দলের কর্মসূচির দিন শান্তি সমাবেশের নামে সমাবেশ ডেকে অশান্তি সৃষ্টি করে। তিনি এখন থেকে শান্তি সমাবেশের পরিবর্তে অশান্তি সমাবেশ নামকরনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, এতে মানুষ ধোকা থেকে বাঁচতে পারবে। গত ২৮ জুলাই বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে অনুষ্ঠিত যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের শান্তি সমাবেশে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে হাফেজ রেজাউল করিমকে নির্মমভাবে খুন করে শান্তি সমাবেশের আসল চরিত্র প্রকাশ করেছে। তিনি অবিলম্বে রেজাউলের খুনিদের গ্রেফতার করার দাবি জানিয়ে বলেন, সরকার আলেম-হাফেজদের খুনিদের আড়াল করলে এই সরকার খুনি সরকার হিসেবে পরিগণিত হবে।
আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে সরকারি দলের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত মাদরাসা শিক্ষার্থী হাফেজ রেজাউল করীম হত্যা, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির প্রতিবাদ এবং সংসদ ভেঙে দিয়ে জাতীয় সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচনের দাবিতে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সংগঠনের ঢাকা মহানগর উত্তর সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন প্রেসিডিয়াম সদস্য আল্লামা নূরুল হুদা ফয়েজী, যুগ্ম মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, সহকারি মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলম, মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম, মাওলানা নূরুল ইসলাম নাঈম, ডা. শহিদুল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার মুরাদ হোসেন, হাফেজ মাওলানা মাকসুদুর রহমান, মুফতী মাছউদুর রহমান, মুফতী আরমান হুসাইন, যুবনেতা হাফিজুল হক ফাইজ, ছাত্রনেতা ইউসুফ পিয়াস, হাবিবুল্লাহ মেসবাহ, আব্দুর রহমান। সমাবেশ পরিচালনা করেন মুফতী ফরিদুল ইসলাম, কেএম শরীয়াতুল্লাহ।
মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেন, এই সরকারের আমলে অনেক আলেম-হাফেজ খুন হয়েছে। অনেক আলেম এখনো কারানির্যাতিত অবস্থায় আছে। তিনি অবিলম্বে কারাবন্দি আলেমসহ বিরোধী নেতাদের মুক্তি দাবি করেন। মাওলানা ইউনুছ আমাদ বলেন, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির ফলে সাধারণ মানুষ অসহায় জীবন যাপন করছে। অনেক শ্রমিক মিল-কারখানা বন্ধে হাহাকার করছে। অনেক কৃষক কৃষিপণ্যের ন্যায্য দাম না পেয়ে কান্না করছে। তিনি বলেন, জালিম ও ফ্যাসিবাদী সরকারের অধীনে নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন অংশ নেবে না এবং দেশের অধিকাংশ নিবন্ধিত দলও অংশ নেবে না। কাজেই সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে জাতীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে।
মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগের অনেক নেতারা বক্তব্যে বলছেন, খেলা হবে, আমরাও বলছি খেলা হবে, তবে পুলিশ বাদ দিয়ে আসুন, খেলা হবে। ভারতের হরিয়ানায় উগ্রবাদী বিজেপির আক্রমনে মসজিদে আগুন, মসজিদের ইমামসহ বেশ কয়েকজন মুসলমান হত্যা করে ধর্মনিরপেক্ষতার ধ্বজাধারী ভারত চরম উগ্রতার পরিচয় দিয়েছে। ভারতের মুসলিমবিদ্বেষীর কর্মকান্ডকে সম্মিলিতভাবে রুখে দিতে হবে। তিনি হরিয়ানায় খুনের প্রতিবাদে বাংলাদেশ সরকারকে সংসদে নিন্দা প্রস্তাব গ্রহণের দাবি জানান।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সভাপতি মাওলানা ইমতিয়াজ আলম বলেন, রেজাউলের হত্যাকান্ডে আবারো আওয়ামী সন্ত্রাসীদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড দেখল দেশবাসী। গত শুক্রবার বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেটে আওয়ামীলীগের তিন সংগঠনের কথিত শান্তি সমাবেশে কেরাণীগঞ্জের বর্তমান এমপি কামরুল ইসলাম ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ গ্রুপের মধ্যে মারামারির সময় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয় নিরীহ পথচারি হাফেজ রেজাউল করিমকে। সরকার এই হত্যাকান্ডকে লুকোচুরি করতে চেয়েছিলো। তিনি খুনিদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবি জানান। তিনি বলেন, সরকার আবারো অবৈধভাবে ক্ষমতায় যেতে চায়। জনগণ এই সরকারকে এক মুহুর্তও চায় না। তিনি ঢাকার দুই মেয়রকে ব্যর্থ মেয়র হিসেবে আখ্যায়িত করে তাদের পদত্যাগ দাবি করেন।
সভাপতির বক্তব্যে মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ বলেন, আওয়ামী সন্ত্রাসীরা শুধু একজন নিরীহ হাফেজকে হত্যাই করেনি; একইসাথে একটি পরিবারের হাল ধরার একমাত্র অবলম্বনকে শেষ করে দিয়েছে! একজন কুরআনে হাফেজ ও মেধাবী ছাত্রকে নির্মমভাবে হত্যায় গোটা জাতি স্তম্ভিত ও ক্ষুব্ধ। এই হত্যাকান্ডের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের আসল চরিত্র প্রকাশ পেয়েছে। তিনি রেজাউল হত্যা এবং ভারতের হরিয়ানায় মুসলমানদের হত্যা একই সূতোঁয় গাঁথা বলে মন্তব্য করেন।
সমাবেশ শেষে একটি বিশাল মিছিল বায়তুল মোকাররম উত্তর থেকে পল্টন মোড়, বিজয়নগর গিয়ে সমাপ্ত হয়। এ সময় তারা সরকারবিরোধী বিভিন্ন শ্লোগানে রাজপথ মুখরিত করে তুলে।